স্বামী বিবেকানন্দের ছোটবেলার গল্প | Childhood story of Swami Vivekananda

আজ আমরা স্বামী বিবেকানন্দের (নরেন) ছোটবেলার মজাদার কিছু গল্পের সম্পর্কে জানব Best Childhood story of Swami Vivekananda. নরেন ছোটবেলায় খুব সাহসী ও দুষ্টু স্বভাবের বালক ছিলেন. আমরা আশা করি নরেন এই গল্পগুলো আপনার খুব ভালো লাগবে. তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক

এই আর্টিকেলে আপনি স্বামী বিবেকানন্দের ছোটবেলা সম্পর্কে জানবেন ও তার ছোটবেলায় ঘটা কিছু মজার কিছু গল্প জানবেন|

তবে সবার প্রথমে স্বামী বিবেকানন্দের সংক্ষিপ্ত জীবনীটা একটু দেখে নেওয়া যাক.

নামস্বামী বিবেকানন্দ
বাল্য নামনরেন্দ্রনাথ দত্ত
পিতাবিশ্বনাথ দত্ত
মাতাভুবনেশ্বরী দেবী
গুরুরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব
জন্মতারিখ১২ ই জানুয়ারি ১৮৬৩
জন্মস্থানউত্তর কলকাতা
কে ছিলেনহিন্দু মহান সন্ন্যাসী আধ্যাত্মিক গুরু লেখ সংগীত দত্ত
শিক্ষাসাহিত্য পাশ্চাত্য, দর্শন, ধর্ম, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান ও শিল্পকলা
বিদ্যালয়ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রতিষ্ঠিত মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন
বিশ্ববিদ্যালয়প্রেসিডেন্সি কলেজ এবং স্কটিশ চার্চ কলেজ ( Calcutta )
জাতীয়তাভারতীয়
ধর্মহিন্দু ধর্ম
জাতিবাঙালি
মৃত্যু৪ ঠা জুলাই ১৯০২
স্বামী বিবেকানন্দ
swami vivekananda biography 2
swami vivekananda

বিবেকানন্দের ছোটবেলা ( নরেন্দ্রনাথ )

তাহলে এসো কথা বলি তার শুরু জীবনের স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম ১২ জানুয়ারি ১৮৬৩ সালে মকর সংক্রান্তির দিন হয়েছিল। মকর সংক্রান্তি একটা উৎসব ঐদিন গঙ্গা নদীর কিনারায় প্রচুর লোক পূজা করতে আসত, স্বামীজীর ঘর থেকে ওই পুজো আরোতি আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল, স্বামীজীর মা ভগবান কে খুব মানতো ও পূজা পাঠ করতেন, যাতে তার এক ছেলে হয় এবং সে তার পরিবারের নাম উঁচু করে।

একদিন স্বামী বিবেকানন্দের মা ভুবনেশ্বরী দেবী স্বপ্নে ভগবান শিবকে দেখলেন তিনি দেখলেন যে ভগবান তাকে বলছে যে সে তার ছেলের রুপে জন্মগ্রহণ করবে| এই কথা শুনে স্বামীজীর মা খুবই খুশি হন ও তার চোখের খুশির জল পরছিল|

এইজন্যই তার ছেলের নাম বীরেশ্বর যা ভগবান শিবের আরেক নাম রাখতে চেয়েছিল কিন্তু তার পরিবার স্বামীজীর নাম নরেন্দ্রনাথ রাখলেন|স্বামীজীকে সবাই ভালোবেসে নরেন বলে ডাকত, কে জানতো বড় হয়ে স্বামী বিবেকানন্দ হবে| যার সবাই এত সম্মান করবে,

হিন্দু ধর্মের জন্য তার ভালোবাসা ছোটবেলা থেকেই পরিস্কার দেখা যেত|তার জন্ম কলকাতার দত্ত পরিবারে হয়েছিল এবং তাঁর পরিবারের সবাই খুবই বুদ্ধিমান ও লেখাপড়া ছিল, আর প্রায়ই অন্যদের সাহায্য করত যার কারণে স্বামীজীর খুব নাম ছিল সবাই স্বামীজীকে খুব মানতো, তার পিতা কলকাতার হাইকোর্টের লয়ার ছিলেন|নরেন তার পিতার মতো কম দাদুর মত বেশি ছিল|

তার পিতা সব সুবিধা ভালো লাগতো কিন্তু নরেন সাধুর মত সিম্পল থাকতে পছন্দ করত| তার জীবনের প্রথম শিক্ষক তার মা ছিলেন তার মা তাকে অ্যালফাবেট আর ইংলিশের ওয়ার্ড শেখাতো, সে তাকে রামায়ণ ও মহাভারতের গল্প শোনাতো, ছোট নরেন কে রামজির গল্প খুব পছন্দ হতো রাম নাম হিরোর মত লাগতো, সে তার স্ত্রী সীতাকে বাঁচানোর জন্য লড়াই অব্দি করেছিল|

নরেন সব বাচ্চা থেকে আলাদা ছিল মনে হয় তার জন্য তার স্বপ্ন আলাদা আসত| আর নরেন ভাবতো সবাইকেই এইরকমই স্বপ্ন আসে এটা কোন বড় কথা নয়| হঠাৎ একবার তার স্বপ্নের চকচকে বল দেখা গিয়েছিল, যেখান থেকে খুব আলোর রশ্মি বের হচ্ছিল, যার রং বদলাতেই আছে ওই বল ধীরে ধীরে বড় হচ্ছিল এবং এ পয়েন্টে এসে ফেটে গিয়েছিল, সেখান থেকে বেরোনো রশ্মি সাদা রং তার উপরে পড়তে থাকে এবং তাকে পুরোপুরি ঢেকে দেয়|

স্বামী বিবেকানন্দের ছেলেবেলা (নরেন) এর ছেলেবেলার মজার গল্প

এতক্ষণ আমরা স্বামী বিবেকানন্দের ছোটবেলা এবং কিভাবে ছেলেবেলার তার প্রথম শিক্ষা তার মা এর কাছে থেকে প্রাপ্য হয় সেই ব্যাপারটি জানলাম। এইবার আমরা স্বামী বিবেকানন্দের ছেলেবেলার কিছু মজার ও আশ্চর্যজনক গল্প গুলোর ব্যাপারে পড়বো। আশা করছি বন্ধুরা আপনাদের এই গল্পের সংগ্রহটি ভালো লাগবে, তো চলুন গল্প গুলো শুরু করা যাক

ধ্যানে মগ্ন নরেনের একটি ঘটনা

ছোটবেলায় স্বামী বিবেকানন্দ (নরেন) শিবের খুবই ভক্ত ছিলেন, তাই তিনি প্রায়ই শিবের পূজা ও ধ্যান করতেন, হঠাৎ একদিন নরেন এক বটগাছের তলায় বন্ধুদের সাথে ধ্যান ধ্যান খেলছিলেন হঠাৎ ‌খেলতে খেলতে একটি সাব এসে পড়ে।

সাপের ফোঁস শুনে তার বন্ধুরা চোখ খোলে দেখে এবং প্রকাশ্য সাপ দেখে বন্ধুরা ভয়ে চিৎকার করে ছুটে পালিয়ে যায়, বন্ধুদের এই চিৎকারেও নরেনের ধান ভাঙ্গে নি , এবং নরেনের বন্ধুরা কিছুটা দূর থেকে নরেন কে ডাকাডাকি করতে লাগলো এতেও নরেনের ধান ভাঙলো না,

কিন্তু ধ্যানমগ্ন নরেনের মধ্যে উঠে আসার কোনোও প্রবণতা না দেখতে পেয়ে তারা সেখান থেকে চলে যায়। কিছুক্ষন পর সাপটি‌ও নরেনকে কিছু না করে তার পাশ কাটিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। পরে নরেন ধ্যানভঙ্গ হলে তার বন্ধুরা জিজ্ঞাসা করে আর নরিন বলে আমিতো তোদের ডাক শুনতে পাইনি|ধ্যানমগ্ন অবস্থায় তার মনে হচ্ছিল যে সে যেন এক অন্য জগতের বাসিন্দা হয়ে গিয়েছে|

ঘটনা

স্বামীজী এবং চম্পক গাছ

ছোটোবেলায় নরেন তার এক বন্ধুর বাড়ির পাশে চম্পক বন্ধুদের নিয়ে খেলতো। চম্পাকা ফুলগুলি শিবের পছন্দ বলে বলা হয় এবং ঘটনাক্রমে স্বামীজিরও প্রিয় ছিল।এটি ছিল স্বামীজির প্রিয় গাছ এই গাছ নরেন মাথা নিচু করে দুলতো প্রায়,একদিন যখন সে গাছ থেকে দোল খাচ্ছিল,

তখন বাড়ির বৃদ্ধ এবং প্রায় অন্ধ দাদা তার কণ্ঠস্বর চিনতে পেরে তার কাছে এলেন। বৃদ্ধ ভয় পেয়েছিলেন যে ছেলেটি পড়ে গিয়ে নিজের ক্ষতি করতে পারে বা আরও খারাপ যে সে তার মূল্যবান কিছু চম্পাকা ফুল হারাবে! নরেন কে গাছ থেকে নামিয়ে বলল তুমি এই গাছে উঠ না, নরেন জিজ্ঞাসা করল কেন? বৃদ্ধ মানুষটি বলল এই গাছে ব্রহ্মদত্ত বাস করে এবং রাতে সে সাদা পোশাক পরে ঘুরে বেড়ায়,

এটা নরেনের কাছে খবর ছিল, নরেন জানতে চেয়েছিলেন এই ভূত ঘুরে বেড়ানো ছাড়া আর কী করতে পারে। বৃদ্ধ উত্তর দিলেন আর যারা গাছে উঠে তাদের ঘাড় ভেঙ্গে দেয়!
নরেন কেবল মাথা নাড়িয়া কিছু বলিল না এবং বৃদ্ধ লোকটি ভয়ঙ্কর হাসি হাসিয়া চলে গেল।

নরেনের মনে কৌতুহল জাগতে লাগলো, এবং নরেন বাড়ি গিয়ে ভাবল সে আজ রাতে ওই চম্পক গাছে থাকবে সে দেখতে চাই ব্রহ্মদত্ত দেখতে কেমন আর সে কি করে| ব্রহ্মদত্ত কে দেখার জন্য রাত্রিবেলায় চুপ চাপ করে সেই গাছে গিয়ে উঠে বসে থাকে। কিন্তু ভোর হলে গেলে কোনো ব্রম্ভদত্তের দেখা পেল না|

অন্যদিক সকাল হতেই নরেনের বাড়িতে হইচই শুরু হয়ে যায়। বাড়ির লোকও পাড়ার লোক মিলে সবাই নরেন কে খুঁজতে শুরু করে, খুঁজিতে খুঁজিতে সেই গাছের কাছে পৌঁছায় সবাই এবং সেই বৃদ্ধ লোকটি ও আসে, এবং সকলে মিলে নরেন কে জিজ্ঞাসা করল যে রাতে কেন সে এসেছিল এই গাছে ?

তখন নরেন বলেন যে ব্রহ্মদত্ত দেখার জন্য সে এই গাছে অপেক্ষা করছিল, অথচ কাউকেই সে দেখতে পায়নি। ফলতঃ খেলার আর বাঁধা র‌ইল না। তার কথা শুনে বিস্ময়ে হতবুদ্ধ হয়ে যান সকলে।

ঘটনা

নরেন্দ্রনাথ খুব সুন্দর গল্প করতে পারতেন । তার কথা এবং ব্যক্তিত্বের এমন আকর্ষণ ছিল যে, তিনি গল্প আরম্ভ করলে সবাই সব কাজ ভুলে তার কথাই শুনতেন। স্কুলের ক্লাসের শিক্ষক আস্তে দেরী হচ্ছে দেখে নরেন্ তার বন্ধুদের নিয়ে গল্প করছিল, গল্প এতো জমে যায় যে কিছুক্ষণ পরে ক্লাসে শিক্ষক এসে পড়ানো শুরু করে দেয়, কিন্তু গল্পে এত মগ্ন যে কেউ বুঝতে পারেনি, সবাই মন দিয়ে ধরনের কথা শুনছিল|

কিছুক্ষণ পরে ফিসফিস শব্দ শুনে শিক্ষক ব্যাপারটা বুঝতে পারলেন। এই ঘটনা দেখে শিক্ষক বিরক্ত হয়ে তিনি এক এক করে সবাইকে পরীক্ষা করলেন যে, তিনি যা কিছু পড়াচ্ছিলেন ছাত্ররা তা শুনেছে কিনা? কেউ শিক্ষকের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারল না।

এরপর নরেন কে জিজ্ঞাসা করলে নরেন সব প্রশ্নের উত্তর সঠিক দিয়ে দেয়| কারণ নরেনের মন ছিল দু-মুখো ছিল যখন শিক্ষক পড়াচ্ছিলেন তখন শুনছিলেন এবং বন্ধুদের গল্প শোনার ছিলেন| তাই শিক্ষক বাকিদের ক্লাসে দাঁড়িয়ে থাকতে বলল| সকলের সঙ্গে নরেন্ ও উঠে দাঁড়ালেন, তখন শিক্ষক বললেন তোমাকে দাঁড়াতে হবে না।

নরেন্দ্র বললেন না আমাকেও দাঁড়াতে হবে, কারণ আমিই তো কথা বলছিলাম।সকলের সাথে তিনিও দাঁড়িয়ে রইলেন।এ ই দেখে শিক্ষক অবাক হয়ে গেলেন নরেনের সততা ও বুদ্ধি দেখে|

ঘটনা

স্বামী বিবেকানন্দ পড়াশোনায় খুবই ভাল ছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দের নতুন নতুন বই পড়ার খুব শখ ছিল| শিকাগোতে থাকাকালীন স্বামী বিবেকানন্দ সেখানকার এক লাইব্রেরীতে যেতেন ও প্রতিদিন একটি করে নতুন বই নিয়ে আসতেন ও তারপরের দিন ফিরিয়ে দিতেন|

এই দেখে লাইবেরিয়ার একটু সংকোচ বোধ করলেন, এবং লাইবেরিয়ার একদিন স্বামী বিবেকানন্দকে জিজ্ঞাসা করলেন আপনি যখন বইগুলো পড়তে চান না তাহলে কেন নিয়ে যান? তখন স্বামী বিবেকানন্দ বললেন আমার এই বইগুলো পড়া হয়ে গিয়েছে, তখন লাইব্রেরিয়ান আরো বিরক্তি হলেন এবং বললেন এটা সম্ভব নয়|

তখন স্বামী বিবেকানন্দ বললেন আপনি এই বইগুলোর মধ্যে যেকোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারেন আমাকে, এবং লাইব্রেরিয়ান বিরক্ত হয়ে তাকে কিছু প্রশ্ন করল এবং স্বামী বিবেকানন্দ সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিল. এই দেখে লাইব্রেরিয়ান অবাক হয়ে গেলেন এইরকম মানুষ এর আগে কখনো দেখেনি সে.

উপসংহার

আশাকরি আপনার স্বামী বিবেকানন্দের ছোটবেলার গল্প গুলি ভালো লেগেছে| বিবেকানন্দের থেকে পাওয়া প্রত্যেকটি গল্প বলুন বাণী বলুন সমস্ত কিছু থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি এবং জীবনে কাজে লাগিয়ে আমরা সফল অর্জন করতে পারি| তাই সকল স্বামী বিবেকানন্দ প্রেমী মানুষদের জানাই যে আপনারা আপনাদের নিজের জীবনে খুব সফলতা অর্জন করুন ও জীবনে এগিয়ে যান ধন্যবাদ……….

সচরাচর জিজ্ঞাসা করার কিছু স্বামী বিবেকানন্দের প্রশ্ন

Swami Vivekananda FAQ

স্বামী বিবেকানন্দ 1863 খ্রিস্টাব্দের 12th January জন্ম গ্রহণ করেন।
১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দের ১২ ই জানুয়ারি উত্তর কলকাতার সিমলাপাড়ার বিখ্যাত দত্ত পরিবারে নরেন্দ্রনাথ ওরফে স্বামী বিবেকানন্দ জন্মগ্রহণ করেছিলেন ।
দুর্গা প্রসাদ দত্ত| স্বামীজীর ঠাকুরদাদা ছিলেন
ক্রিকেট-ফুটবল, ঘষাঘষি, লাফানো, ছোটাছুটি, মার্বেল

Leave a Comment